ইসলাম কী ? What is Islam ?

ইসলাম কী 


ইসলাম কী ? এটা আমাদের সকলেরই সঠিকভাবে জানা দরকার। শুধুমাত্র নামায পড়া, শুক্রবারে মসজিদে যাওয়া, মিলাদ পড়া ইত্যাদি কিছু আচার—আনুষ্ঠিকতা পালন করাই ইসলাম নয়।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলে দিয়েছেন :

“ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।”

মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সে কিভাবে পরিচালিত হবে, তার ছাত্রজীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন তথা সামগ্রিক জীবনযাপন পদ্ধতি কিভাবে পরিচালিত হবে তা পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলে দিয়েছেন এবং মানবতার মহানবী আমাদের প্রিয় রাসূল (সা) তার সমস্ত জীবন ধরে আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি মানুষ রচিত যত মতাদর্শ, যত সমাজ ব্যবস্থা পৃথিবীতে এসেছিল সবই সমাজে স্থায়ী শান্তি—শৃংখলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে।  আজ আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি পুঁজিবাদী, আগ্রাসনবাদী, ভোগবাদী আর আত্মকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা। এটা আমাদেরকে কোনভাবেই শান্তি দিতে পারছেনা। জনপদে জনপদে আজ চলছে চরম নৈরাজ্য, হানাহানি। ধর্মের নামে সন্ত্রাস। অসুস্থ রাজনীতি, দখলবাজ—আগ্রাসনবাদ আজ আমাদের এ বসুন্ধরাকে গ্রাস করেছে।
তাই আসুন, আমরা সবাই ইসলামকে ভালোভাবে জানি এবং সেভাবে নিজের জীবনকে পরিচালিত করি। শুধু নিজে জানলে হবে না, নিজের পরিবারকে, অধিনস্তদেরকে, আশেপাশের মানুষকেও জানাতে হবে, বোঝাতে হবে।

ইসলাম মূলত: পাঁচটি স্তম্ভ বা পিলারের উপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হলো ঃ
১.      কলিমা বা ঈমান
২.      সালাত বা নামায
৩.     সিয়াম বা রোজা
৪.      হজ্ব  ও
৫.     যাকাত

আমরা সবাই আল­াহর বান্দা। কিন্তু পৃথিবীতে নানা ধর্ম—বর্ণ—বিশ্বাসের মানুষ আছে। যেমন— মুসলমান, খৃস্টান, ইহুদী, হিন্দু, বৌদ্ধ ইত্যাদি। শুধুমাত্র যারা এক আল্লাহ তথা মহান সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদে বিশ্বাস করে তাদেরকে মুসলমান বলে। শুধুমাত্র ঈমান আনলেই মুসলমান হওয়া যায় না। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, গাছপালা—তরুলতা—পশুপাখি সৃষ্টি করেছেন, সারাজাহান— আসমান—যমীনের তিনিই মালিক। তিনি ফিরিশতা সৃষ্টি করেছেন, আসমানী কিতাব প্রেরণ করেছেন, নবী—রাসূল প্রেরণ করেছেন, আখিরাত অর্থাৎ পরকাল বলে আমাদের আর একটা জীবন আছে, তাকদীরে অর্থাৎ ভাগ্য ইত্যাদি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে সে অনুযায়ী জিন্দেগী যাপন করলেই একজন সত্যিকারের মুসলমান হতে পারে।

নামায

ঈমান আনার পর একজন মুসলমানকে দৈনিক ৫ (পাঁচ) ওয়াক্ত নামায পড়া ফরজ করা হয়েছে। নামায একটা অবশ্যই পালনীয় শাররীক ইবাদত। নিজে নামায পড়তে হবে অপরকেও নামাযের জন্য আহ্বান করতে হবে। পবিত্র কুরআনে বার বার ইরশাদ হয়েছে—“আক্বিমুস্ সালাত” অর্থাৎ নামায কায়েম কর বা প্রতিষ্ঠা কর। এছাড়াও আছে—“নামায মানুষকে সকল পাপ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।”
রাসূলে কারীম (সা) বলেছেন— “নামায হচ্ছে বেহেশতের চাবি।”
আমাদেরকে সহিহ শুদ্ধভাবে নামায পড়তে হবে। রাসূল (সা) যেভাবে নামায পড়তেন আমাদেরকেও সেভাবেই নামায পড়তে হবে। নিজে না জানলে কোন ভালো আলেম থেকে শুদ্ধভাবে নামায পড়া শিখে নিতে হবে। এতে লজ্জার কিছু নেই। লজ্জা করলে আমরা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবো।
নামাযের মধ্যে সূরা—ক্বিরাত পড়তে হয়। তাই আমাদেরকে সহিহ—শুদ্ধভাবে কুরআন পড়াও শিখে নিতে হবে। নামাযের ফরয—সুন্নত—ওয়াজিব জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী নামায আদায় করতে হবে।


সিয়াম বা রোযা

নামাযের পর ইসলামে রোযার স্থান। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের উপর বছরে একমাস (৩০ দিন) রোযা পালন করা ফরয করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন—
“তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারো।”
শাররীকভাবে সুস্থ—সবল সকলের জন্য অবশ্যই পালনীয় শাররীক ইবাদত। এই রোযা আমাদেরকে সংযম শিক্ষা দেয়। এর ফলে মানুষের মন্দ প্রবণতা নিয়ন্ত্রিত হয়। পূর্ণ একমাস রোযা পালনের পর মানুষ একেবারে নিষ্পাপ—মাছুম হয়ে যায়।

হজ্জ্ব

ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ হলো হজ্জ। শাররীকভাবে সুস্থ এবং সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য জীবনে অন্ততঃপক্ষে একবার হজ্ব পালন করা ফরজ।
আমাদের দেশে অনেকেই অনেক ধনদৌলতের মালিক হওয়া সত্বেও হজ্ব পালন করতে চান না। তারা মনে করেন তাদের পয়সা নস্ট হবে। আবার অনেকেই নাম কামানোর জন্য, লোকে উনাকে হাজী সাহেব বলবেন এজন্য হজ্জ করে থাকেন। যেকোন ধর্মীয় কাজ শুধুমাত্র আল­াহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। লোক দেখানোর জন্য নয়।
সম্পদশালী হওয়ার পরও যদি কেহ জীবনে একবারও হজ্ব পালন না করেন তাহলে কাল কিয়ামতের দিন তিনি মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি হবেন।

যাকাত

হজ্বের পর যাকাত। যাকাত ইসলামী সমাজব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আজকের পৃথিবীতে যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি প্রবর্তন করা দরকার। তাহলেই পৃথিবী থেকে দারিদ্রতা দূর হবে, ধনী—গরীবের বৈষম্য দূর হবে।
ইসলামী শরীয়ত মতে যে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা তার সমপরিমাণ অর্থের মালিক তাকে বাৎসরিক হারে যাকাত প্রদান করতে হবে। এই যাকাত রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থায় বা ব্যক্তিগতভাবেও প্রদান করা যায়। যাকাত আদায় করলে সম্পদ পবিত্র হয়ে যায় এবং হপাক তার হেফাযত করেন।
আল­াহপাক রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে তাঁর প্রদত্ত এবং রাসূল (সা) প্রদর্শিত জীবন বিধান অনুসরণ করে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন\

------------------------------

আলোচনা


প্রথমে নিজে সম্পূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হতে হবে। তারপর পরিবারের অন্যান্যদেরকেও দাখিল করাতে হবে। নিজের সন্তানদেরকে বাল্যকাল থেকেই নামায—রোযা, শরীয়তের মৌলিক শিক্ষাসমূহ দিতে হবে। হারাম হালাল শিক্ষা দিতে হবে। দুনিয়াবী শিক্ষার পাশাপাশি তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষাসমূহ অবশ্যই দিতে হবে তাঁর চর্চা করাতে হবে। তা না হলে কাল আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে যে, কেন তুমি তোমার সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দাওনি?
মা—বাবার প্রতি খেয়াল রাখলে হবে। বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। স্ত্রীকে তাঁর অধিকার দিতে হবে, মর্যাদা দিতে হবে। আত্মীয়—স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। তাঁদের বিপদে—আপদে সাহায্য করতে হবে।
সামাজিক জীবনে সবার সাথে মিলেমিশে চলতে হবে। পরস্পরের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। আপদে—বিপদে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বড়দের শ্রদ্ধা—সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করতে হবে। এটা এক মানুষের প্রতি অন্য মানুষের হক। রাসূল (সা) বলেছেন— “যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত যাপন করে আর সে পেটভরে খায়, সে ব্যক্তি মুমিন নয়।” তাই প্রতিবেশীদের মধ্যে কেহ অভাবগ্রস্থ আছে কিনা খবর রাখতে হবে।
ছিন্নমুল—অসহায়—দরিদ্রদের সাহায্য করতে হবে। নিজের অর্জিত সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করার পরও দান—খয়রাত করতে হবে। রাসূল (সা) বলেছেন— “এমনভাবে দান কর যেন ডান হাত দিয়ে দান করলে বাম হাত না জানে” এবং “দানে ধন বাড়ে।”
ধনবানদের সম্পদে গরীবদের হক আছে। তাই যাকাত আদায়ের পরও গরীব—মিসকিনদের দান—খয়রাত করতে হবে।
এভাবে সবার প্রতি সবার হক যথাযথভাবে পালন করলে সমাজে সুখ—শান্তি বজায় থাকবে।

ইসলামকে জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে। বায়তুল মুকাররমস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেনশনের লাইব্রেরীতে আপনি প্রচুর কুরআন, হাদীস, ইসলামের ইতিহাস, শরীয়াত মাসআলা—মাসায়েল সম্পর্কিত অনেক বই পাবেন। সামর্থ্য হলে কিনতেও পারেন কিংবা লাইব্রেরীতে বসে পড়তেও পারেন।
এছাড়া ঢাকার বাইরেও সকল জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরী রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনতো সরকারী প্রতিষ্ঠান। বেসরকারীভাবেও অনেক ইসলামী প্রকাশনা ও লাইব্রেরী রয়েছে। সেখান থেকে আপনি ইসলামিক বই—পুস্তক সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।
এছাড়াও আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে ইমেইল করুন এবং আমার সাইটটি সম্পর্কে মন্তব্য করুন।  ধন্যবাদ